জুম চাষ আদিবাসীদের শত শত বছরের ঐতিহ্য। পৌষ-মাঘ মাসে সুবিধাজনক সময়ে চাষের জন্য পাহাড়ের ঢালে এক টুকরো জঙ্গল নির্বাচন করে সেই জঙ্গলের সমস্ত গাছ, বাঁশ, ঝাড়-জঙ্গল কেটে ফেলা হয়। কাটার পর যা থাকে তা চৈত্র মাস অবধি রোদে শুকানো হয়। চৈত্রের শুরুতে এতে আগুন দেওয়া হলে শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সঙ্গে উপরের ১-২ ইঞ্চি মাটিও। ছাই ও পোড়ামাটির জন্য জমি উর্বর হয় ঠিকই কিন্তু মৃত্যু ঘটে সকল ফ্লোরা ও ফনার। এরপর দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে জমি ভিজে নরম হয়। এই জমিতে অমানুষিক পরিশ্রমে রক্ত পানি করে চলে জুম পদ্ধতির চাষাবাদ। এক বা দুই বছর পরেই পুরাতন জুম তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। পরিবেশের এত ক্ষতি আর এত রক্তজল পরিশ্রমের পর জমি যদি দুবছরেই উর্বরতা হারায় তাহলে তা মেনে নেয়া কষ্টের কিন্তু তারপরও পাহাড়ের মানুষগুলোকে আবার নতুন পাহাড় আর বনের গায়ে আগুন দিতে হয় নতুন জুম ক্ষেত্র তৈরীর জন্য কারণ জুমচাষ ছাড়া জীবনধারণের আর কোন পদ্ধতি পাহাড়ের মানুষগুলো জানেনা।
আমাদের পার্বত্যাঞ্চল আর আগের মত নাই। গত অর্ধ শতাব্দীতে দেশের জনসংখ্যা মাত্র দুই গুন বাড়লেও পার্বত্যাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় দশগুন। এর মূল কারণ সেটেলাররা। শিশু-মাতৃমৃত্যুর হার কমে গড় আয়ু বাড়ার কারণে আদিবাসীরাও এখন আর সংখ্যায় কম না। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত বছর দশেক ধরে গাছ চুরি অতিমাত্রায় বেড়েছে। ইনফ্যাক্ট গাছ চুরির জন্যই অনেক জায়গায় যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নত করা হয়েছে। বছর চারেক ধরে শুরু হয়েছে ঝিরি-নদী থেকে পাথর আহরণ। এসব বন্ধে সরকারী এজেন্সিগুলো শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং চুরির বখরা নিয়ে নিজেদের কলুষিত করেছে।
এই বর্ধিত চাপ পাহাড় আর নিতে পারছেনা। প্রাকৃতিক বন কমে আসার কারণে ঝিরি-ঝর্ণা ও নদীর প্রবাহ শুকিয়ে আসছে। বর্ষা ছাড়া এখন সারাবছরই খরা। আর জুম চাষের জন্য উপযুক্ত জমিও আর খুব একটা অবশিষ্ট নাই পাহাড়ে। বিপদে পড়েছে সেসব সরল আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা জুম চাষ ছাড়া আর কিছুই পারেন না। আগে জুমচাষের জন্য পর্যাপ্ত ভূমি পাওয়া যেত বলে উর্বরতা রক্ষার মূল কৌশল হিসেবে প্রাকৃতিক অরণ্য সৃষ্টির জন্য দীর্ঘসময় টার্গেট করা ভূমি অনাবাদি রাখা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অনাবাদি সময়কাল প্রথাগত দশ-চল্লিশ বছর থেকে বিপজ্জনকভাবে দুই থেকে তিন বছরে হ্রাস পেয়েছে। ফলে উৎপাদন ক্রমে এতই হ্রাস পায় যে একটি জুমিয়া পরিবার এক এলাকায় দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারছে না। ব্যাপকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি তথা সর্বনিম্ন ১০-৪০ বছর আবর্তনকাল ফেলে রাখার মত জমির অপ্রাপ্যতার কারণেই গত কয়েক বছরে নানা প্রলোভনে পড়ে অনেক জুমিয়া পরিবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বার্মা চলে গেছে, এখনো যাচ্ছে, সামনে আরো যাবে। সংজ্ঞায়ন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু এভাবে যারা দেশত্যাগ করছে তাদেরকে আমি মূলত 'ক্লাইমেট রিফিউজি' হিসেবেই চিহ্নিত করবো৷
জুমচাষ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। জুমচাষের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে মাটির উর্বরতা হ্রাস, ভূমিক্ষয়, বন উজাড়, বন্য পশুপাখির আবাসস্থল ধ্বংস এবং নদী ও হ্রদসমূহ ভরাট হওয়া। বর্তমান বাস্তবতায় প্রচলিত জুম চাষ করে পাহাড়ীরা আর অন্ন যোগাতে পারবেনা। তাই ট্যারেস ফার্মিং, ফলের বাগান, সমন্বিত চাষাবাদ উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। তবে সকল কর্মকান্ডই করতে হবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে। সেইসাথে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ছাড়া বহিরাগত কাউকে বা কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে ভূমি বরাদ্ধ দেয়া যাবেনা। বিকল্প কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করে সংরক্ষিত বনভূমিতে নতুন করে আগুন দিয়ে জুমচাষ নিষিদ্ধ করা ভিন্ন পাহাড়ের পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষার আর কোন উপায় নেই। অন্যথায় আগামী এক যুগ পরই সমতল থেকে রিসোর্স নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষকে খাওয়াতে হবে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক জুম চাষ বন্ধ হোক।
আমাদের পার্বত্যাঞ্চল আর আগের মত নাই। গত অর্ধ শতাব্দীতে দেশের জনসংখ্যা মাত্র দুই গুন বাড়লেও পার্বত্যাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় দশগুন। এর মূল কারণ সেটেলাররা। শিশু-মাতৃমৃত্যুর হার কমে গড় আয়ু বাড়ার কারণে আদিবাসীরাও এখন আর সংখ্যায় কম না। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত বছর দশেক ধরে গাছ চুরি অতিমাত্রায় বেড়েছে। ইনফ্যাক্ট গাছ চুরির জন্যই অনেক জায়গায় যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নত করা হয়েছে। বছর চারেক ধরে শুরু হয়েছে ঝিরি-নদী থেকে পাথর আহরণ। এসব বন্ধে সরকারী এজেন্সিগুলো শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং চুরির বখরা নিয়ে নিজেদের কলুষিত করেছে।
এই বর্ধিত চাপ পাহাড় আর নিতে পারছেনা। প্রাকৃতিক বন কমে আসার কারণে ঝিরি-ঝর্ণা ও নদীর প্রবাহ শুকিয়ে আসছে। বর্ষা ছাড়া এখন সারাবছরই খরা। আর জুম চাষের জন্য উপযুক্ত জমিও আর খুব একটা অবশিষ্ট নাই পাহাড়ে। বিপদে পড়েছে সেসব সরল আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা জুম চাষ ছাড়া আর কিছুই পারেন না। আগে জুমচাষের জন্য পর্যাপ্ত ভূমি পাওয়া যেত বলে উর্বরতা রক্ষার মূল কৌশল হিসেবে প্রাকৃতিক অরণ্য সৃষ্টির জন্য দীর্ঘসময় টার্গেট করা ভূমি অনাবাদি রাখা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অনাবাদি সময়কাল প্রথাগত দশ-চল্লিশ বছর থেকে বিপজ্জনকভাবে দুই থেকে তিন বছরে হ্রাস পেয়েছে। ফলে উৎপাদন ক্রমে এতই হ্রাস পায় যে একটি জুমিয়া পরিবার এক এলাকায় দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারছে না। ব্যাপকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি তথা সর্বনিম্ন ১০-৪০ বছর আবর্তনকাল ফেলে রাখার মত জমির অপ্রাপ্যতার কারণেই গত কয়েক বছরে নানা প্রলোভনে পড়ে অনেক জুমিয়া পরিবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বার্মা চলে গেছে, এখনো যাচ্ছে, সামনে আরো যাবে। সংজ্ঞায়ন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু এভাবে যারা দেশত্যাগ করছে তাদেরকে আমি মূলত 'ক্লাইমেট রিফিউজি' হিসেবেই চিহ্নিত করবো৷
জুমচাষ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। জুমচাষের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে মাটির উর্বরতা হ্রাস, ভূমিক্ষয়, বন উজাড়, বন্য পশুপাখির আবাসস্থল ধ্বংস এবং নদী ও হ্রদসমূহ ভরাট হওয়া। বর্তমান বাস্তবতায় প্রচলিত জুম চাষ করে পাহাড়ীরা আর অন্ন যোগাতে পারবেনা। তাই ট্যারেস ফার্মিং, ফলের বাগান, সমন্বিত চাষাবাদ উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। তবে সকল কর্মকান্ডই করতে হবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে। সেইসাথে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ছাড়া বহিরাগত কাউকে বা কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে ভূমি বরাদ্ধ দেয়া যাবেনা। বিকল্প কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করে সংরক্ষিত বনভূমিতে নতুন করে আগুন দিয়ে জুমচাষ নিষিদ্ধ করা ভিন্ন পাহাড়ের পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষার আর কোন উপায় নেই। অন্যথায় আগামী এক যুগ পরই সমতল থেকে রিসোর্স নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষকে খাওয়াতে হবে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক জুম চাষ বন্ধ হোক।
No comments:
Post a Comment