ছবির ডানপাশের ব্যক্তির নাম শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী। যারা এদেশে পড়াশোনা করেছেন তারা সবাই উনার লেখা কবর ও রক্তাক্ত প্রান্তর নাটক পাঠ্য হিসেবে পড়েছেন। টাইপরাইটারের জন্য সবচে সাবলীল কিবোর্ড লে-আউটের ডিজাইন "মুনীর অপটিমাম"ও তাঁর করা যার ছায়া আমরা এখনও আমাদের ব্যবহার করা কিবোর্ডে দেখি। তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক ও সেজন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তাঁর সবচে বড় পরিচয় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয়তম প্রফেসর ছিলেন। নানা ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর ক্লাস করতো। ৭১ সালে তিনি ডিপার্টমেন্ট হেড ও পরে আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। তাঁর কিশোর সন্তান সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। তাঁকে ৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল-শামস বাহিনী বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।
সবচে আশ্চর্যজনক হলো দুইজন দুই মেরুর মানুষ হলেও তারা ছিলেন আপন দুই ভাই। নোয়াখালীর সন্তান। তাদের বাবা ছিলেন বৃটিশ আমলের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী। উনার চৌদ্ধ সন্তানের সবাই স্ট্যান্ড করা-খ্যাতিমান। যার বিখ্যাত দুজন হলেন জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
কাইয়ুম চৌধুরীকে ইতিহাস ট্রেইটর হিসেবে মনে রাখবে নাকি একজন বিদূষী মানুষরূপে তা ইতিহাসের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। কাইয়ূম চৌধুরী পক্ষত্যাগ করেননি। তাঁর কাছে হয়তো তার কমিশনের সময় নেয়া শপথ, তাঁর পাঞ্জাবী স্ত্রীর মোটিভেশনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তাছাড়া তিনি আর কখনো বাংলাদেশে না ফিরে এসে মজবুত ইমানের পরিচয় দিয়েছেন। এবং সেখানেও সফল হয়েছেন। অনেকটা আমাদের বর্তমান চাকমা রাজার বাবার মত যিনি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন এবং আর কখনো দেশে না ফিরে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন।
এই লেখার উদ্দেশ্য হলো পরিবার, জন্মভূমি, নিজ রেস বা জাতিসত্বার চাইতেও অনেক সময় যে দায়িত্ব, কর্তব্য, পারিপার্শ্বিকতা অথবা সাহসের অভাব যে ভবিষ্যত নির্ধারণে বড় নিয়ামক হয়ে উঠে তা দেখানো। আর সেই দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের সংজ্ঞাও নির্ধারিত হয় যার যার অবস্থান থেকে। আপেক্ষিকতার এই দুনিয়ায় ধ্রুব সত্য বা ধ্রুব অবস্থান বলে কিছু নেই কারণ পৃথিবীর সন্তানকে ছিন্নভিন্ন করা এই মানচিত্র, সীমানা, ভিসা-পাসপোর্ট সবই বড় ঠুনকো যে!
No comments:
Post a Comment