কুমারীকুন্ড:
পৌরাণিক এক অঞ্চল সীতাকুন্ড। পাহাড়ের এদিকে সেদিক শত শত ছড়া। একেকটা ছড়ায় একেক বিস্ময় লুকিয়ে রাখা। আজ তেমনি এক ছড়ায় খুঁজে পেলাম রহস্যময় এক প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সম্ভবত প্রাচীন হিন্দুরা হট স্প্রিং বা উষ্ণ প্রস্রবণকে পবিত্র ভাবতেন। সীতাকুন্ডের প্রসিদ্ধ লবণাক্ষকুন্ড ও অগ্নিকুন্ড মূলত বুদবুদ করে বেরোনো গ্যাসে জালানো অগ্নিকুন্ডকে উপজীব্য করেই পীঠস্থান নামে গড়ে উঠেছে। হয়তো এটিও ছিলো সেরকমই কোন এক মন্দির। যুগের ব্যবধানে ও মূল তীর্থ অঞ্চল থেকে অন্তত দশ কিলোমিটার দূরত্বজনিত দূর্গমতার কারণে মানুষ যার কথা হয়তো বিস্মৃত হয়েছে। চিপা ঝিরির (আমার মত তীব্র আশাবাদী লোক ছাড়া ভুলেও কেউ এখানে সম্ভাবনার আশা দেখবেনা) ঝোপঝাড়ের ডালপালা ভেঙ্গে অনেকদূর যাবার পর হঠাৎ মাটি চাপা পড়া পুরোনো দিনের ইটের কাঠামো। তারই ভেতরে রীতিমত ক্রলিং করে ডুকে তাজ্জব বনে গেলাম। আট-দশ ফুট গভীর এক স্বচ্ছ নীল পানির পাথর দিয়ে বাঁধানো কূপ, চৌবাচ্চাও বলা যায়। স্বচ্ছ নীল পানির তলদেশ থেকে গ্যাসের বুদবুদ উঠছে। চারপাশের দেয়াল ধ্বসে গেছে সেই কবেই। আশেপাশে কাঠাল পেকে ঝরে পড়ে আছে, গাছে শুধু কাঁঠালের বোত্তা ঝুলছে। চারপাশে অদ্ভুদ শেপের সব পাথর। একদম অপরিচিত লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এই মন্দিরের নাম দূরে থাক কোন গল্পও শুনিনি কখনো। অথচ উদ্দেশ্যহীনভাবেই মিলে গেলো রত্ন। কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন!
(এই জিনিস আমাকে বিস্ময়াভিভূত করেছে অথচ এখানে অল্প যা কিছু দরিদ্র মানুষের আনাগোনা কদাচিৎ ঘটে তাদের কাছে এই জিনিস তাৎপর্যহীন। এই এলাকায় ত্রিপুরারা আসে বাঁশ কাটতে। এরা হিন্দু কিন্তু এরাও তেমন কিছু বলতে পারেনা এই স্থাপনার ব্যাপারে কিন্তু এখানে আসতে ভয় পায়।
আমি এই জিনিস দেখার পর যে দুই চারজন মানুষ পেয়েছি হাটহাজারীর পথে সবাইকেই এটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। একজন ছাড়া কেউ বুঝতেই পারেনি এটা কি বা কোথায়। যে একজন বুঝেছেন তিনি স্থানীয় বাঙালী এবং ইন্টারেষ্টিং তথ্য দিয়েছেন।
প্রথম তথ্য: তিনি তার বাবার কাছে শুনেছেন বৃটিশ আমলে বৃটিশরা নাকি মাঝে মাঝে এখানে এসে "লেংটা" হয়ে গোসল করতেন।
মন্তব্য: লজিকাল। হতেই পারে। হটস্প্রিং এ মানুষ দিগম্বর হয়েই নামে জাপানে। যদিও লজিকালি এটাকে ঠিক হট স্প্রিং বলা যায় না।
দ্বিতীয় তথ্য: বছর পনেরো আগে নাকি দুই সাধু বিশাল সব খাতা, তালপাতার পুথিপত্র নিয়ে এই এলাকায় আসেন। তার বাগান কাছে বিধায় তার সাথে দেখা হয়। তার সাথে দুই বিশাল সাদা দাড়ির সাধুর আলাপ হয়। দুই সাধু মন্দিরটা খুজছিলো। তখন নাকি মন্দিরের তলদেশে একটা " সোনার মূর্তি" ছিলো। (এই অংশ ইলজিকাল) পরে দুই সাধু নাকি এলাকার কিছু খারাপ প্রকৃতির লোককে হাত করে (ইলজিকাল) সোনার মূর্তি চুরি করে নিয়ে যায়। এর পরই নাকি বিশাল পাথরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে। সেই পাথরের দেয়াল থেকে পাথর খুলে নিয়ে অনেকদিন জনৈক "কুজরইত্যা" শিলপাটা বানিয়ে বিক্রি করেছে। এখন নাকি আগের তুলনায় অল্প কিছু পাথর পড়ে আছে।
মন্তব্য: এই তথ্য বা গল্পে প্রচুর ফাঁক আছে। ঘটনা ফেব্রিকেটেড।)
No comments:
Post a Comment