ছবির বামপাশের ব্যাক্তির নাম ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ছিলেন কাকুলে অবস্থিত পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীতে সোর্ড অব অনার পাওয়া প্রথম বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। ৭১ সালে তিনি একজন কর্ণেল হিসেবে যশোর ক্যান্টনমেন্টে দায়িত্বরত ছিলেন। ২৭ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্টের সকল বাঙালি অফিসার-সৈনিক বিদ্রোহ করে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করলেও কাইয়ুম চৌধুরী পক্ষত্যাগ করেননি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হয়েই ৭১ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেই কন্টিনিউ করেন এবং ৭৪ এ ব্রিগেডিয়ার হিসেবে অবসর নেন। পাকিস্তানি জেনারেল প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের আমলে সচিব পদমর্যাদায় সরকারের তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত হন এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ২০১৩ সালে মারা যাওয়াতক আর কখনোই তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেননি।
ডানপাশের ব্যক্তির নাম শহীদ মুনীর চৌধুরী। যারা এদেশে পড়াশোনা করেছেন তারা সবাই উনার লেখা কবর ও রক্তাক্ত প্রান্তর নাটক পাঠ্য হিসেবে পড়েছেন। টাইপরাইটারের জন্য সবচে সাবলীল কিবোর্ড লে-আউটের ডিজাইন "মুনীর অপটিমাম"ও তাঁর করা যার ছায়া আমরা এখনও আমাদের ব্যবহার করা বাংলা কিবোর্ডে দেখি। তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক ও সেজন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তাঁর সবচে বড় পরিচয় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয়তম একজন প্রফেসর যার ক্লাসে নানা ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা আসতো। যাদের অনেককেই দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। ৭১ সালে তিনি ডিপার্টমেন্ট হেড ও আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। তাঁর কিশোর সন্তান সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধের শেষদিকে ১৪ ডিসেম্বর আল-শামস বাহিনী তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ও পরবর্তীতে হত্যা করে।
সবচে আশ্চর্যজনক হলো এই দুইজন দুই মেরুর মানুষ হলেও তারা সম্পর্কে ছিলেন আপন দুই ভাই। তাঁদের বাবা ছিলেন বৃটিশ আমলের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নোয়াখালীর খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী। উনার ১৪ সন্তানের সবাই স্ট্যান্ড করা-খ্যাতিমান-সফল। বিখ্যাত দুজন হলেন জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
কাইয়ুম চৌধুরীকে ইতিহাস ট্রেইটর হিসেবে মনে রাখবে নাকি একজন সাচ্চা পাকিস্তানী বিদূষী মানুষরূপে তা ইতিহাস লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করবে। কাইয়ূম চৌধুরী পাকিস্তান নামক ইউটোপিয়ান আদর্শের পক্ষত্যাগ করেননি। তার কাছে হয়তো কমিশনের সময় নেয়া শপথ, তার পাঞ্জাবী স্ত্রীর মোটিভেশনই আত্মপরিচয়ের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এক্ষেত্রে তিনি আর কখনো বাংলাদেশে না ফিরে এসে মজবুত ইমানের পরিচয় দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে সেখানেও সফল হয়েছেন। অনেকটা আমাদের বর্তমান চাকমা রাজার বাবার মত যিনি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশে না ফিরে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যারা পাকিস্তান নামক আদর্শে বিশ্বাসী তাদের সেখানেই থাকা উচিৎ!
একই সাথে শৈশব কাটানো, একই সবুজ শ্যামলে মা বাবার স্নেহছায়ে একই থালা-বাটি-বিছানা-কম্বল শেয়ার করা দুটো মানুষের ভবিতব্য যে এত বিপরীতমুখী হবে কেউ কি জানতো? বিচিত্র এই পৃথিবীতে আরো বিচিত্র মানুষের মনস্তত্ত্ব! তাই পরিবার, জন্মভূমি, নিজ রেস বা জাতিসত্বার চাইতেও অনেক সময় দায়িত্ব, কর্তব্য, বিবেক- বিবেকহীনতা, পারিপার্শ্বিকতা অথবা সাহস-সাহসের অভাব ভবিষ্যত নির্ধারণে বড় নিয়ামক হয়ে উঠে। আর সেই দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের সংজ্ঞাও নির্ধারিত হয় যার যার অবস্থান থেকে। আপেক্ষিকতার এই দুনিয়ায় ধ্রুব সত্য বা ধ্রুব অবস্থান বলে কিছু নেই কারণ পৃথিবীর সন্তানকে ছিন্নভিন্ন করা এই মানচিত্র, সীমানা, ভিসা-পাসপোর্ট সবই মহাকালের স্বাপেক্ষে মানুষের ক্ষুদ্রতার মত বড়!
ডানপাশের ব্যক্তির নাম শহীদ মুনীর চৌধুরী। যারা এদেশে পড়াশোনা করেছেন তারা সবাই উনার লেখা কবর ও রক্তাক্ত প্রান্তর নাটক পাঠ্য হিসেবে পড়েছেন। টাইপরাইটারের জন্য সবচে সাবলীল কিবোর্ড লে-আউটের ডিজাইন "মুনীর অপটিমাম"ও তাঁর করা যার ছায়া আমরা এখনও আমাদের ব্যবহার করা বাংলা কিবোর্ডে দেখি। তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক ও সেজন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তাঁর সবচে বড় পরিচয় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয়তম একজন প্রফেসর যার ক্লাসে নানা ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা আসতো। যাদের অনেককেই দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। ৭১ সালে তিনি ডিপার্টমেন্ট হেড ও আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। তাঁর কিশোর সন্তান সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধের শেষদিকে ১৪ ডিসেম্বর আল-শামস বাহিনী তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ও পরবর্তীতে হত্যা করে।
সবচে আশ্চর্যজনক হলো এই দুইজন দুই মেরুর মানুষ হলেও তারা সম্পর্কে ছিলেন আপন দুই ভাই। তাঁদের বাবা ছিলেন বৃটিশ আমলের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নোয়াখালীর খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী। উনার ১৪ সন্তানের সবাই স্ট্যান্ড করা-খ্যাতিমান-সফল। বিখ্যাত দুজন হলেন জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
কাইয়ুম চৌধুরীকে ইতিহাস ট্রেইটর হিসেবে মনে রাখবে নাকি একজন সাচ্চা পাকিস্তানী বিদূষী মানুষরূপে তা ইতিহাস লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করবে। কাইয়ূম চৌধুরী পাকিস্তান নামক ইউটোপিয়ান আদর্শের পক্ষত্যাগ করেননি। তার কাছে হয়তো কমিশনের সময় নেয়া শপথ, তার পাঞ্জাবী স্ত্রীর মোটিভেশনই আত্মপরিচয়ের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এক্ষেত্রে তিনি আর কখনো বাংলাদেশে না ফিরে এসে মজবুত ইমানের পরিচয় দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে সেখানেও সফল হয়েছেন। অনেকটা আমাদের বর্তমান চাকমা রাজার বাবার মত যিনি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশে না ফিরে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যারা পাকিস্তান নামক আদর্শে বিশ্বাসী তাদের সেখানেই থাকা উচিৎ!
একই সাথে শৈশব কাটানো, একই সবুজ শ্যামলে মা বাবার স্নেহছায়ে একই থালা-বাটি-বিছানা-কম্বল শেয়ার করা দুটো মানুষের ভবিতব্য যে এত বিপরীতমুখী হবে কেউ কি জানতো? বিচিত্র এই পৃথিবীতে আরো বিচিত্র মানুষের মনস্তত্ত্ব! তাই পরিবার, জন্মভূমি, নিজ রেস বা জাতিসত্বার চাইতেও অনেক সময় দায়িত্ব, কর্তব্য, বিবেক- বিবেকহীনতা, পারিপার্শ্বিকতা অথবা সাহস-সাহসের অভাব ভবিষ্যত নির্ধারণে বড় নিয়ামক হয়ে উঠে। আর সেই দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের সংজ্ঞাও নির্ধারিত হয় যার যার অবস্থান থেকে। আপেক্ষিকতার এই দুনিয়ায় ধ্রুব সত্য বা ধ্রুব অবস্থান বলে কিছু নেই কারণ পৃথিবীর সন্তানকে ছিন্নভিন্ন করা এই মানচিত্র, সীমানা, ভিসা-পাসপোর্ট সবই মহাকালের স্বাপেক্ষে মানুষের ক্ষুদ্রতার মত বড়!
No comments:
Post a Comment