
রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে এই শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত কোনমতে টিকে থাকা বইয়ের দোকানগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়। রেলযাত্রায় এদের মিস করি। অথচ সুসময়ে দেখেছি এদের দোকানভর্তি বই। দোকানের বাইরে ক্লিপে ঝোলানো থাকতো সারী সারী ইন্ডিয়ান কমিকস; চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিংকী, রমন, ফ্যান্টম ইত্যাদি। বাইরে ঝোলানো থাকতো অশ্লীল কাভার ফটোসমেত নানান পিন আপ ম্যাগাজিন (এগুলো আসলেই স্টাপল করা থাকতো যাতে না কিনে কেউ ভেতরের কন্টেন্ট পড়তে না পারে) এদের নাম হতো অপরাধ দিয়ে; যেমন অপরাধ জগত, অপরাধ বার্তা, অপরাধ চিত্র ইত্যাদি। নিউজ টাইপ হতো নানান পাড়া মহল্লার সুড়সুড়ি নিউজ যার অনেকগুলোই পেইড। যেমন: টানবাজারের মক্ষীরানি সুরাইয়া এখন কোথায়? অথবা কলারোয়ায় যুবতী শ্বাশুড়িকে নিয়ে ভেগে গেলেন জামাই! আরো থাকতো সিনেমার ম্যাগাজিন, সফট চটি যায় যায় দিন, মৌচাকে ঢিল ইত্যাদি৷ ক্রীড়ালোক, ক্রীড়াজগত টাইপ স্পোর্টস পাক্ষিক, তারকালোক, ছায়াছন্দ, বিচিত্রা (পরে ২০০০), পূর্ণিমা, রোববার, রহস্যপত্রিকা, উন্মাদ, কম্পিউটার জগত, প্রেস্ক্রিপশন টাইপ মেইনস্ট্রিম ম্যাগাজিন। বাচ্চাদের জন্য থাকতো কিশোরপত্রিকা, কিশোর তারকালোক ইত্যাদি। বইয়ের মধ্যে তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, সেবা রোমান্টিক, ওয়েষ্টার্ণ, অনুবাদ অর্থাৎ সেবার বইয়ের আধিক্য থাকতো। থাকতো সস্তা ছাপায় শরৎচন্দ্র ও ভারতীয় কিছু লেখকের কপি বই, কাশেম বিন আবু বকরের হালাল উপন্যাস, শিবির অধ্যুষিত এলাকায় সাইমুম সিরিজ। থাকতো মকসুদুল মোমেনিন, বেহেশতী জেওর, মৃত্যুর আগে হাশরের পরে টাইপ ইসলামী বই৷ থাকতো পত্রমিতালী গাইড, ৩০ দিনে আরবী-ইংলিশ ভাষা শিক্ষার বই, র্যাপিডেক্স এর ইংলিশ স্পিকিং কোর্সের বই, ডেল কার্নেগীর বই, শিব খেরার মোটিভেশনাল বুক তুমিও পারবে ইত্যাদি! কদিন আগে চিটাগাং স্টেশানে দেখলাম বইঘর নামের দোকানটাতে অন্য সব পণ্য আছে; শুধু নাই বই! কই গেলো সেই দিন? কই গেলো লাল ইটের দালান? কই গেলো প্লাটফর্মের কোণে চারকোনা সেই লাইব্ররী? কই গেলো সেই পাঠক আর বইগুলো?
No comments:
Post a Comment