8 May 2020

মিজোরাম সীমান্তের ঠেগামুখ বা থেগামুখঃ যেখানে কর্ণফুলী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে




ভোর পাঁচটায় ১৬০ লিটার অকটেন স্পীড বোটে তোলা হলো। আসা যাওয়া মিলিয়ে দূরত্ব নেহায়েত কম নয়, ১৯০-২০০ কিলোমিটার হবে। পুরোটাই জলপথ। যাত্রা শুরু হলো। মাঝে বরকল নেমে একটু বাজার ঘুরে এলাম। তারপর কলাবাড়িয়া, ভুষণছড়া ইত্যাদি ছাড়িয়ে ছোট হরিণা বাজার। বাজারে নেমে কিছু বেসিক কেনাকাটা সারলাম। এখানে আগেও একবার এসে একরাত কাটিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু থেগামুখ যাওয়ার অনুমতি মিলেনি। কিন্তু এইবার তো হিসেব আলাদা! 😎 যথাসময়ে জোন হেডকোয়ার্টারে পৌঁছুবার পর জেলা প্রশাসনের সরকারী স্পীড বোটে বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে দিলেন বিজিবি জওয়ানেরা। এরপর সীমান্ত নদী ধরে যাত্রা শুরু। একটার পর একটা বিওপি বা সীমান্তচৌকি পার হয়ে চললাম। কিছুদূর যেতেই মিজোরামের উঁচু পাহাড় চোখে পড়লো। নদীর তীর ঘেষে বিএসএফের কয়েকতলা উঁচু চৌকি থেকে সতর্ক জওয়ানের বাইনোকুলারের লেন্সে রোদের ঝিলিক আর কিছু সীমান্ত গ্রাম। আফসোস ওপারে মিজোরামের দূর্গমতম গ্রামগুলোতেও ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে পাকা সড়ক সাথে বিজলি বাতি। রাতের বেলায় ওপারের ঝলমলে আলোর জগত দেখে এপাড়ে বাংলাদেশের দূর্গমতম স্থানে বসবাসকারী আদিবাসী জনগণ ও বিজিবি বাহিনী কি দীর্ঘশ্বাসটাই না জানি ফেলে!
থেগামুখ বিওপিতে স্বাগত জানালেন বিজিবি সদস্যরা। রীতিমত এসকর্ট দিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন আশেপাশের এলাকা। চার ঘন্টার মত স্থানীয় বাজারে লোকাল লোকজনের সাথে কথাবার্তা বললাম।  ভারতীয় পণ্য সহজলভ্য: মুভ স্প্রে আর কিটক্যাট কিনলাম। স্থানীয় বাচ্চাদের সাথে খেললাম। থেগা খালে গিয়ে ভারত থেকে আসা মিজোদের সাথে আলাপ হলো। তারপর থেগা ক্যাম্পের আপ্যায়ণ শেষে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুপুর আড়াইটা নাগাদ হরিণা জোন হেডকোয়ার্টারে পৌঁছুলাম। হাজির হওয়া মাত্রই খুলে দেয়া হলো সুপরিসর ঝকঝকে তকতকে বিশ্রামাগার। সংলগ্ন ইংলিশ কমোড সমেত বিশাল ওয়াশরুম। আরামসে শাওয়ার নিলাম। নাহ! এই জায়গায় এতোটা আশা করি নাই।

ইতিমধ্যে লাঞ্চে স্বাগত জানালেন জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আতিক চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন ডা: ইহসান। দেশী মুরগী, লেকের বাতাসী - কাজলী মাছ, শুটকি, নানা পদের শাক ভর্তা ডাল সহ বাংলা খাবারের বিশাল আয়োজন। বাটলাররা খাবার পরিবেশন করছিলো আর খাবার ফাঁকে ফাঁকে আতিক সাহেব ও ইহসান সাহেবের সাথে নানা বিষয়ে আলাপ হচ্ছিলো। দুজনই অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। ফর্ক-নাইফ দিয়ে দেশী খাবার খেতে অনভ্যস্ত আমি বেশি সুবিধা করতে পারছিলাম না। খাবার শেষে কয়েক রকম ফল ও ডেজার্ট আসলো।
 আমাদের ফেরার তাড়া ছিলো। তাই বিদায়ের অনুমতি চাইলাম। তড়িঘড়ি করে উনি অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার ডেকে আমাদের সাথে কিছু ছবি তুললেন। হাতে তুলে দিলেন উনার ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার স্যুভেনিয়র। নারে ভাই! এতোটাও আশা করি নাই!

 আতিক সাহেবকে অনুরোধ করলাম পরবর্তীতে কোন ট্যুরিষ্ট যদি কষ্ট করএ এতোদূর চলে আসে আর যদি সম্ভব হয় তবে যেন তল্লাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ সাপেক্ষে এলাউ করেন। উনি নানান সীমাবদ্ধতা ও জটিলতার কথা বললেন। বুঝলাম শেখ সাদী সেজে না আসলে গতবারের মত এবারেও এখানে হালে পানি পাওয়া যেতো না!



থেগামুখের পথঃ https://youtu.be/41ryYXPPGJk
থেগামুখ বাজারঃ https://youtu.be/te5SWbryrl0

No comments:

Post a Comment