13 Jul 2020

চুতিয়া সমাচার

চুতিয়া সমাচার

কয়েক বছর আগে আসামের গুয়াহাটি শহরে পদব্রজে ভ্রমণের সময় শহরের ব্যস্ততম ফেন্সীবাজারে রাস্তার ধারে অসমিয়া ভাষায় লেখা এক দেয়াল লিখনে চোখ আটকে যায়। অসমিয়া বর্ণমালা প্রায় বাংলার মতোই তাই পড়া ও বুঝা যায়।  দেয়ালে লিখা ছিলো 'চুতিয়া সন্মিলন' এ যোগদানের আহবান। ব্যাপারটা আজব লেগেছিলো!

সেইসময় ইন্ডিয়ান সিম একটিভ না থাকায় ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম তাই  তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি নিউজ নজরে পড়ে। নিউজটি আপনাদের জন্য শেয়ার করছি:

"নামের সঙ্গে ‘চুতিয়া’ শব্দটি থাকলেই অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
শব্দটি উপমহাদেশে গালি হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবে এ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন আসাম রাজ্যের ‘চুতিয়া’ সম্প্রদায়ের লোকজন। ‘দ্যা অল আসাম চুতিয়া স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’ বা আসাকসু অভিযোগ করেছে তাদের সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি প্রসাদ চুতিয়া জানান, ফেসবুক আমাদের ‘চুতিয়া’ সম্প্রদায়ের সব সদস্যের অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিয়েছে, নামের শেষে চুতিয়া শব্দটি থাকায় ফেসবুক এটিকে গালি বা মিথ্যা শব্দ মনে করে হয়ত অ্যাকাউন্টগুলো বাতিল করছে। ফেসবুক জানেনা যে ‘চুতিয়া’ হচ্ছে আসামের একটি উপজাতি। অথচ জাতীয় ইতিহাসে আমাদের এ উপজাতির ইতিহাস অনেক গৌরবমণ্ডিত। চুতিয়া সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বলেছে, এ ঘটনাটি আমাদের উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সম্মানহানির। শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় গুয়াহাটিতে এক মিটিংয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘চুতিয়া’ কমিউনিটির ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।"

চুতিয়ারা বাস করে মধ্য আসাম ও অরুণাচলের কাছাকাছি উত্তর আসামে। ডিব্রুগড়, শোণিতপুর, জোড়হাট, সাদিয়া ও তিনশুকিয়াতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ চুতিয়ার বাস। চুতিয়াদের আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। দশম থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর তারা স্বাধীন চুতিয়া রাজ্যে বসবাস করতো। এ সময় আশেপাশের নানা জনজাতির সাথে নানা যুদ্ধে জয়লাভ করেই তারা তাদের স্বাধীনতা টিকিয়ে রেখেছিলো। তাদের বীরাঙ্গনার নাম সতী সাধনী। বহুদিন ধরেই চুতিয়া জাতি ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মানাধীন ভারতের সর্ববৃহৎ দোতলা সেতুর (বগীবিল সেতু) নামকরণ সতী সাধনী সেতু করার দাবী করে আসছে।

এক দেশের গালি আরেক দেশের বুলি। যেমন ভুটানে গেলে মেয়েদের সবচে কমন নাম হলো Choden! যাই হোক এরপরের বার আসাম গেলে একটা না একটা চুতিয়া বন্ধু জুটিয়ে আসতে হবে!

No comments:

Post a Comment