30 Jul 2020

সকল সেলিব্রেটিদের খানা শেষ, মামুন-অফুর বাংলাদেশ!

সাকিব খান বা সাকিব আল হাসান না। এরাই বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি এক্টিভ ফ্যানওয়ালা সেলিব্রেটি! যাদের নামে থানায় থানায় ফ্যাব ক্লাব আছে!

সাকিব খান বা সাকিব আল হাসান না। এরাই বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি এক্টিভ ফ্যানওয়ালা সেলিব্রেটি! যাদের নামে থানায় থানায় ফ্যাব ক্লাব আছে!

সকল সেলিব্রেটিদের খানা শেষ, মামুন-অফুর বাংলাদেশ।

নোয়াখালীর বার্বার শপে কাজ করা অপু 'অফু বাই' নামে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লাইকি ও টিকটকে। অফুর উইয়ার্ড হাসি, ক্রিপি হেয়ারস্টাইল ও অদ্ভুত সব ডায়ালগের জন্য এই তরুণকে মূলত রোষ্ট করতে করতে বিখ্যাত বানিয়েছে ইউটিউবাররা। সেকারণেই সে অল্প সময়ের মধ্যেও রিচের দিক দিয়ে মামুনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখন সে ঢাকা এসে তার ফ্যানক্লাবের ফ্যানদের সাথে মিটআপ ও নতুন বান্ধবীদের সাথে ডেট করে বেড়াচ্ছে। তবে এই জগতেও আছে বিরোধ। তারই জের ধরে অফুর ফ্যানদের প্রিন্স মামুনের ফ্যানরা কদিন আগে মারধোর করেছে। এত কিছুর পরেও অফু বাই এর রিচ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

টিকটক লাইকির সুপারষ্টার বিশ বছর বয়সী প্রিন্স মামুনের ফলোয়ার দশ মিলিয়ন প্লাস বা এক কোটি সামথিং। সে টিকটক ও লাইকি এপে নেচে ও লিপ্সিং করে এত ভক্ত অর্জন করেছে। ঢাকার নানান গলি ঘুপচির মধ্যে নাচানাচি করে পপুলারিটি পেলেও তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার ফ্যানরা এখন দিয়াবাড়ি, আগারগাঁও, টিএসসি, লালবাগ কেল্লা ও হাতিরঝিলকে পরিণত করেছে টিকটক পাড়ায়। অদ্ভুত ড্রেস আপ ও হেয়ার স্টাইলের শত শত টিন এজার ও তরুণ-তরুণীদের আজকাল মামুনের মত খ্যাতি পাবার আশায় এসব জায়গায় পথচারীদের বিব্রত করে নাচাগানার শুটিং করতে দেখা যায়। পাবলিক ন্যুনসেন্স তৈরী ও ইভটিজিং এর দায়ে গত সপ্তায় মামুনকে দিয়াবাড়িতে স্থানীয় ছেলেরা মারধোরও করেছে। তারপরেও শ্রমজীবি ও কালচারালি ডিপ্রাইভড ইয়ংস্টারদের মধ্যে মামুনের জনপ্রিয়তা কমে নাই। বরং তার নামে এলাকায় এলাকায় ফ্যান ক্লাবের মিট আপ চলছে। ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হতে মামুনও তার হলুদ R15 বাইক নিয়ে হাজির হচ্ছেন সেখানে৷ হবেন না কেন? বহু স্কুল ও গার্মেন্টসগামী কিশোর কিশোরীর স্বপ্নের নায়ক যে এখন টেন মিলিয়ন সেলিব্রেটি প্রিন্স মামুন!

যা লিখলাম এসব হলো আমার গত কয়েকদিনের ঘাটাঘাটিতে অর্জিত জ্ঞান। কিন্তু কিভাবে বা কেন এরা এত জনপ্রিয়তা পেলো? এই কোটি কোটি কিশোর কিশোরী কেন এদের মত উইয়ার্ড জিনিসপত্রকে আইডল মেনে নিচ্ছে?? এর কারণ আমার মতে সাংস্কৃতিক বঞ্চনা। বিপুল পরিমাণে শিশু কিশোর শ্রমজীবি আছে বাংলাদেশে যারা কালচারালি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে৷ ছয় দিন কাজ করে সপ্তম দিনের ছুটিতে অংশগ্রহণ মূলক একটা বিনোদন মাধ্যম পেয়ে তারা তা আকড়ে ধরেছে৷ কারণ গুরুত্বহীন বঞ্চনার জীবনকে ভুলে এখানেই আছে নায়ক হবার সুযোগ। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে অগভীর পারিবারিক মূল্যবোধের স্কুল কলেজে যাওয়া লাখ লাখ শিশু কিশোর যাদের বাবা মা কখনোই তাদের হাতে পড়ার বইয়ের বাইরের কোন বই হাতে তুলে দেয়নি, ঘুরতে নিয়ে যায়নি, খেলতে পাঠায়নি, পাশে বসিয়ে শোনায়নি কোন গল্প বা নীতিকথা।  সর্বোপরি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, সচেতন বা অসচেতনভাবে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বা বিনোদনের কোন ব্যবস্থাই করতে পারেনি। এদের অনেকেই খেলার মাঠ না পেলেও নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের আগেই হাতে পেয়ে গেছে সেলফোন৷ তাই তথাকথিত সহজ জনপ্রিয়তার ট্রেন্ডি আর ফাংকি ব্যাপারগুলোই এদের মনোজগতের মনোযোগ পেয়েছে এবং দিনশেষে সেই ফাঁদেই পড়ে আছে বাচ্চাগুলো!

মানুষের বিনোদন পিপাসী হৃদয় শূণ্যতা চায়না৷ তাই যেখানে পজেটিভ বিনোদন থাকবেনা সেখানে এ ধরণের বিনোদনেই শূণ্যতা পূরণ হবে। দেশ যে একটি সাংস্কৃতিক দূর্ভিক্ষ বা cultural famine এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে টিকটক চর্চা ও টিকটক সেলিব্রেটিদের উত্থান তারই প্রমাণ।

এদের কারো সক্ষমতাকে আমি খাটো করছিনা। যে টিন স্পিরিট, স্বতস্ফুর্ততা আর প্রতিভার ছাপ এদের কর্মযজ্ঞে দেখেছি তা প্রশংসার দাবী রাখে৷ কিন্তু এই প্রতিভার সাথে সুসংস্কৃতি ও সুশিক্ষার চর্চার সুযোগ পেলে এদের প্রতিভা আরো বিকশিত হতো এবং কয়েকদিন পর হুট করে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পতনের অভিজ্ঞতাটা ওদের হতোনা বলে আফসোসটা থেকেই যাচ্ছে! তারপরেও রইলো শুভকামনা!

অপু নজরুল
২৯-০৭-২০
নোয়াখালীর বার্বার শপে কাজ করা অপু 'অফু বাই' নামে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লাইকি ও টিকটকে। অফুর উইয়ার্ড হাসি, ক্রিপি হেয়ারস্টাইল ও অদ্ভুত সব ডায়ালগের জন্য এই তরুণকে মূলত রোষ্ট করতে করতে বিখ্যাত বানিয়েছে ইউটিউবাররা। সেকারণেই সে অল্প সময়ের মধ্যেও রিচের দিক দিয়ে মামুনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখন সে ঢাকা এসে তার ফ্যানক্লাবের ফ্যানদের সাথে মিটআপ ও নতুন বান্ধবীদের সাথে ডেট করে বেড়াচ্ছে। তবে এই জগতেও আছে বিরোধ। তারই জের ধরে অফুর ফ্যানদের প্রিন্স মামুনের ফ্যানরা কদিন আগে মারধোর করেছে। এত কিছুর পরেও অফু বাই এর রিচ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

টিকটক লাইকির সুপারষ্টার বিশ বছর বয়সী প্রিন্স মামুনের ফলোয়ার দশ মিলিয়ন প্লাস বা এক কোটি সামথিং। সে টিকটক ও লাইকি এপে নেচে ও লিপ্সিং করে এত ভক্ত অর্জন করেছে। ঢাকার নানান গলি ঘুপচির মধ্যে নাচানাচি করে পপুলারিটি পেলেও তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার ফ্যানরা এখন দিয়াবাড়ি, আগারগাঁও, টিএসসি, লালবাগ কেল্লা ও হাতিরঝিলকে পরিণত করেছে টিকটক পাড়ায়। অদ্ভুত ড্রেস আপ ও হেয়ার স্টাইলের শত শত টিন এজার ও তরুণ-তরুণীদের আজকাল মামুনের মত খ্যাতি পাবার আশায় এসব জায়গায় পথচারীদের বিব্রত করে নাচাগানার শুটিং করতে দেখা যায়। পাবলিক ন্যুনসেন্স তৈরী ও ইভটিজিং এর দায়ে গত সপ্তায় মামুনকে দিয়াবাড়িতে স্থানীয় ছেলেরা মারধোরও করেছে। তারপরেও শ্রমজীবি ও কালচারালি ডিপ্রাইভড ইয়ংস্টারদের মধ্যে মামুনের জনপ্রিয়তা কমে নাই। বরং তার নামে এলাকায় এলাকায় ফ্যান ক্লাবের মিট আপ চলছে। ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হতে মামুনও তার হলুদ R15 বাইক নিয়ে হাজির হচ্ছেন সেখানে৷ হবেন না কেন? বহু স্কুল ও গার্মেন্টসগামী কিশোর কিশোরীর স্বপ্নের নায়ক যে এখন টেন মিলিয়ন সেলিব্রেটি প্রিন্স মামুন!

যা লিখলাম এসব হলো আমার গত কয়েকদিনের ঘাটাঘাটিতে অর্জিত জ্ঞান। কিন্তু কিভাবে বা কেন এরা এত জনপ্রিয়তা পেলো? এই কোটি কোটি কিশোর কিশোরী কেন এদের মত উইয়ার্ড জিনিসপত্রকে আইডল মেনে নিচ্ছে?? এর কারণ আমার মতে সাংস্কৃতিক বঞ্চনা। বিপুল পরিমাণে শিশু কিশোর শ্রমজীবি আছে বাংলাদেশে যারা কালচারালি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে৷ ছয় দিন কাজ করে সপ্তম দিনের ছুটিতে অংশগ্রহণ মূলক একটা বিনোদন মাধ্যম পেয়ে তারা তা আকড়ে ধরেছে৷ কারণ গুরুত্বহীন বঞ্চনার জীবনকে ভুলে এখানেই আছে নায়ক হবার সুযোগ। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে অগভীর পারিবারিক মূল্যবোধের স্কুল কলেজে যাওয়া লাখ লাখ শিশু কিশোর যাদের বাবা মা কখনোই তাদের হাতে পড়ার বইয়ের বাইরের কোন বই হাতে তুলে দেয়নি, ঘুরতে নিয়ে যায়নি, খেলতে পাঠায়নি, পাশে বসিয়ে শোনায়নি কোন গল্প বা নীতিকথা।  সর্বোপরি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, সচেতন বা অসচেতনভাবে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বা বিনোদনের কোন ব্যবস্থাই করতে পারেনি। এদের অনেকেই খেলার মাঠ না পেলেও নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের আগেই হাতে পেয়ে গেছে সেলফোন৷ তাই তথাকথিত সহজ জনপ্রিয়তার ট্রেন্ডি আর ফাংকি ব্যাপারগুলোই এদের মনোজগতের মনোযোগ পেয়েছে এবং দিনশেষে সেই ফাঁদেই পড়ে আছে বাচ্চাগুলো!

মানুষের বিনোদন পিপাসী হৃদয় শূণ্যতা চায়না৷ তাই যেখানে পজেটিভ বিনোদন থাকবেনা সেখানে এ ধরণের বিনোদনেই শূণ্যতা পূরণ হবে। দেশ যে একটি সাংস্কৃতিক দূর্ভিক্ষ বা cultural famine এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে টিকটক চর্চা ও টিকটক সেলিব্রেটিদের উত্থান তারই প্রমাণ।

এদের কারো সক্ষমতাকে আমি খাটো করছিনা। যে টিন স্পিরিট, স্বতস্ফুর্ততা আর প্রতিভার ছাপ এদের কর্মযজ্ঞে দেখেছি তা প্রশংসার দাবী রাখে৷ কিন্তু এই প্রতিভার সাথে সুসংস্কৃতি ও সুশিক্ষার চর্চার সুযোগ পেলে এদের প্রতিভা আরো বিকশিত হতো এবং কয়েকদিন পর হুট করে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পতনের অভিজ্ঞতাটা ওদের হতোনা বলে আফসোসটা থেকেই যাচ্ছে! তারপরেও রইলো শুভকামনা!

অপু নজরুল
২৯-০৭-২০

No comments:

Post a Comment