8 Jul 2015

“ভ্রমন স্বাস্থ্য তথ্য”......“ম্যালেরিয়া”



লেখকঃ ডাঃ ইমরুল হাসান ওয়ার্সী
অন্যতম এডমিন, ইকোট্যুরিজম ন্যাচার স্টাডি এন্ড এডভেঞ্চার ক্লাব


আমরা সবাই জানি এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশা এই রোগের জীবানু বহন করে এবং মশার কামড়েই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
পাহাড়ে ভ্রমনকারী সচেতন মহলের কাছে ম্যালেরিয়া একটি মূর্তিমান আতংকের নাম। সঠিক সময়ে চিকিত্সা না নিলে মৃত্যু অনিবার্য। কোনো কোনো ম্যালেরিয়া যেমন সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে  আবার চিকিত্সার সময়ই পাওয়া যায় না। আমি পার্বত্য জেলায় এরকম বেশ কিছু কেস পেয়েছি যারা সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে কোনো রকম চিকিত্সা নেবার আগেই।
অথচ একটু সচেতন হলেই এই ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার এবং মশারোধী ক্রিম শরীরের খোলা জায়গায় মেখে নিলে এবং সঠিক নিয়মে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী চিকিত্সা নিলে অনায়াসে ম্যালেরিয়া মুক্ত থাকা যায়।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের  ABCD



A: Awareness about Malaria distribution অর্থাত ভ্রমণের স্থান ম্যালেরিয়া প্রবন কি না খোজ নিতে হবে
B: Bite control অর্থাত ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় মশার কামর প্রতিরোধ করতে হবে
C: Chemoprophylaxis অর্থাত ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিকিত্সা নিতে হবে
D: Diagnosis and treatment অর্থাত দ্রুত রোগ নির্ণয় করে ম্যালেরিয়া হয়ে থাকলে চিকিত্সা নিতে হবে

A এবং B নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছি এবারে C অর্থাত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিকিত্সা নিয়ে আলোচনা করব    

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের প্রচলিত চিকিত্সা সম্পর্কিত এই টেবিল থেকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ গুলি সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যাবে


*এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেন সবচেয়ে সহজ চিকিত্সা কোনটি?


১ নম্বরে আসবে ম্যালেরণ(atovaquine+Proguanil) কারণ মাত্র ১ দিন আগে শুরু করে ভ্রমন শেষের মাত্র ৭ দিন এই কম্বিনেশন ওষুধ টি খেতে হবে। তাছাড়া নুন্বতম ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে সবাই খেতে পারে এবং রেসিস্টান্ট হবার কোনো রিপোর্ট নাই।
তবে অত্যন্ত বাযবহুল এই ওষুধ এদেশে খুব একটা সহজ প্রাপ্যও নয়।

Chloroquine এর ক্ষেত্রে ১ সপ্তাহ আগে শুরু করে ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতি সপ্তাহে ১ টি করে খেতে হবে এবং ফিরে আসার পর ৪ সপ্তাহে চারটি ট্যাবলেট খেয়ে ডোজ কমপ্লিট করতে হবে।  এখন ধরুন আপনি ওই এলাকায় ২ সপ্তাহ থাকলেন।  তাহলে আপনার ডোজ হবে ৭ সপ্তাহের ৭ টি ট্যাবলেট ( ভ্রমণের পূর্বে ১ টি + ভ্রমন কালে ২ টি + ভ্রমন পরবর্তী ৪ টি )

Doxicycline এর ক্ষেত্রে ১ দিন  আগে শুরু করে ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতি দিন  ১ টি করে খেতে হবে এবং ফিরে আসার পর ৪ সপ্তাহে অর্থাত ২৮ দিন প্রতিদিন ১ টি করে ট্যাবলেট খেয়ে ডোজ কমপ্লিট করতে হবে।  এখন ধরুন আপনি ওই এলাকায় ২ দিন  থাকলেন।  তাহলে আপনার ডোজ হবে ৩১ দিনের ৩১ টি ট্যাবলেট ( ভ্রমণের ১ দিন পূর্বে ১ টি + ভ্রমন কালে ২ টি + ভ্রমন পরবর্তী ২৮ টি )

Mefloquine আর Chloroquine ডোজ একই রকম তবে শুরু করতে ভ্রমণের হবে ২ সপ্তাহ আগে। থাইল্যান্ড এ ওষুধ টি প্রায়ই রেসিস্তান্ট হয়ে গেছে তাই যারা ওই দেশের ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় ভ্রমন করবেন তাদের Mefloquine ছাড়া অন্য রেজিমেন্ট নেয়া বাঞ্চনীয়

**মনে রাখত হবে যে এই অসুধ গুলোর একটি ডোজ ও যদি বাদ যায় আপনি ম্যালেরিয়ার ঝুকিতে থাকবেন এবং এই ওষুধ পরবর্তিতে আপনার জন্য কাজ নাও করতে পারে। 

প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখি যদিও Chloroquine (অব্লোকুইন) ম্যালেরিয়ার স্পেসিফিক ওষুধ তার পরেও এডভেঞ্চার টুরিস্ট দের ম্যালেরিয়ার জন্য আমি Doxicycline কেই এগিয়ে রাখি।


এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমন 
১। অধিকাংস সময়েই আমরা হুট করে ২/১ দিনের নোটিশে টুর প্লান করে থাকি ফলে ১ সপ্তাহ আগের ক্লোরোকুইন খাওয়া পসিবল হয় না কিন্তু Doxicycline আগের রাত্রেই শুরু করে একই ফল পাওয়া যায়।
২। Doxicycline পারা মহল্লার  প্রায় সকল ওষুধের দোকানেই পাওয়া যায় অন্যদিকে Chloroquine এর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।যদি আপনার কাছে ফুল ডোজ না থাকে কিংবা হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায় 
৩। এডভেঞ্চার টুরে ম্যালেরিয়ার ঝুকি ছাড়াও পোকা মাকড়ের কামর কিংবা ছোট খাটো কাটা ছেড়া থেকেও ইন্ফেকসনের ঝুকি থাকে যা Doxicycline কভারেজে খাকার কারণে হ্রাস পায় । Chloroquine এর ক্ষেত্রে এই বাড়তি সুবিধা নাই। 
৪। সপ্তাহে ১ টা ওষুধ খেতে হয় বলে Chloroquine এর ডোজ ভুলে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
৫। Chloroquine এর তুলনায় Doxicycline দামেও বেশ কম। 
৬। Doxicycline দামে কম (একই সাথে লাভও কম) হবার কারণে ফার্মাসিতে বিক্রেতাদের কাছে কম জনপ্রিয়। ফলে যত্রতত্র ব্যবহার না হবার কারণে রেজিস্টান্স হবার সম্ভাবনা অনেক কম..........



No comments:

Post a Comment